আমরা দুই বন্ধু মিলে ঠিক করলাম ভারতে যাব। আমাদের ইচ্ছাটাকে উসকে দিল গ্রামের রসিক লাল বিশ্বাসের নাতনি অশোক। ডাকনাম ক্যানতার। কয়েক বছর পূর্বে সে ভারতে চলে গেছে। অশোক ও তার মামারা কলকাতার একটি কারখানায় কাজ করে। কয়েক দিনের জন্য এদেশে বেড়াতে এসেছে। তার সাথে আলাপ করেই আমরা ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। আপাতঃ দৃষ্টিতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে আমরা যাচ্ছি। কিন্তু আমার মনের গভীরে সুপ্ত আর একটি ইচ্ছা ছিল। আমার এক বন্ধু বছর তিনেক আগে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে ভারতে স্থায়ীভাবে অবস্থান করছে। তার নাম আব্দুল হামিদ। মণিরামপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্যামকুড় গ্রামে বাড়ি। সে ভারতে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন আমার সাথে পত্র যোগাযোগ ছিল। আমার এই ইচ্ছার কথাটা বেড়ানোর সাথী বন্ধুকেও জানালাম না। ভেবেছিলাম ভারতে গিয়ে তার সংগে যোগাযোগের চেষ্টা করব। তখন সুবিধামত সময়ে বন্ধুকে জানান যাবে। সম্ভব হলে সেখান থেকে তার কাছে চলে যাব। সেখানে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মন চাইলে হামিদের কাছে থেকে যাব। আমার এই সফরসঙ্গী বন্ধুটি আমার থেকে ৩ থেকে ৪ বছরের ছোট হবে। ওর বয়স ১৫/১৬ বছর। নাম স্বপন বিশ্বাস। একই গ্রামে বাড়ি। আমাকে সে ভাই বলে ডাকে। বয়সে ছোট হলেও হালকা রসিকতা ও বন্ধু সুলভ আচরণ করে।
বাংলাদেশ থেকে লোকজন হর হামেশাই পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে যাতায়াত করে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলার মানুষজন। যারা দুই দেশের ভেতর চোরাই পথে লোক আনা-নেয়ার কাজ করে তাদেরকে দালাল বলে। আমরা দুই জন মিলে এমন একজন দালাল ঠিক করলাম যে প্রায় আমাদেরই সমবয়সী। নাম সুকেন বিশ্বাস। সমবয়সী হওয়ার সুবাদে তার সংগে আমাদের সম্পর্কও ভাল ছিল। আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমাদের যাওয়ার দিন ঠিক করলাম। আমরা উভয়ে আমাদের এই পরিকল্পনার কথা উভয় পরিবারের কাছে গোপন রাখলাম। আমার একটা বাইসাইকেল ছিল তা বিক্রি করে টাকার যোগাড় করলাম। স্বপনের বাড়িতে মুদিখানা দোকান আছে। বাবা-মার পাশাপাশি সে নিজেও দোকানদারি করত। সেও তার মত প্রয়োজনীয় টাকার যোগাড় করেছে। আমরা সুকেনের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করলাম আমাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার খবর কেউ যাতে জানতে না পারে তার জন্য আমরা আলাদা আলাদা ভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চুকনগর বাজারে গিয়ে মিলিত হব।
পয়লা সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সাল। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানসিকভাবে অবিচল থেকে বেরিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেই। কিন্তু ভিতরে ভিতরে অজানা আশঙ্কা কাজ করছিল। এই রকম সিদ্ধান্ত এটাই প্রথম। চোরাই পথে সীমান্ত পারাপারে কত রকম বিপদের কথা শোনা যায়। এমনকি সীমান্ত রক্ষীদের গুলিতে চোরাপথে যাতায়াতকারীদের মৃত্যুর খবরও মাঝে মধ্যে শোনা যায়। বিদেশ-বিভুই, কত রকম বিপদ হতে পারে। কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার আবর্তে পড়ে জীবনে যদি আর দেশে ফিরতে না পারি। এসব কথা ভেবে মাঝে মাঝে মনটা দুর্বল হয়ে পড়ছিল বটে; কিন্তু বাইরে যেন প্রকাশ না পায় তার জন্য সচেষ্ট ছিলাম সর্বদা। নির্ধারিত দিনের সকালে বাড়িতে জানিয়ে দিলাম বড় বোনের বাড়ি যাচ্ছি। আমার বড় বোনের বাড়ি চুকনগর বাজারের পাশে চাকুন্দিয়া গ্রামে। সে কারণে আমাদের বাড়ির কেউ আমাকে সন্দেহ করেনি। তবে রওনা হওয়ার ঠিক আগের মুহুর্তে আমাদের সকলের ছোট ভাই শাহিনুরকে বললাম ঠিকমত লেখাপড়া করার কথা। কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এল। কারণ আমার ছোট্ট ভাইটা রাতে আমার কাছে ঘুমাত। পরে জানতে পারি আমার ওই কথায় বাড়ির সকলে সন্দেহ করেছিল।
নির্ধারিত দিনে আমরা পৃথক পৃথক ভাবে চুকনগর বাজারে গিয়ে মিলিত হই। সেখান থেকে আমরা তিনজন বাসে সাতক্ষীরা পৌঁছে পৃথক বাসে চড়লাম। সেই বাস থেকে পথিমধ্যে নেমে তুজলপুর গ্রামের একটি আটচালা ঘরের বারান্দায় আশ্রয় নিলাম। সুকেন আমাদের জানাল এখানে বেশ কিছু সময় অবস্থান করতে হবে। কারণ হিসেবে জানাল সীমান্তে নতুন চাকমা বি,ডি,আর অফিসার পরিদর্শনে এসেছে; সে চলে না গেলে সীমান্তে যাওয়া যাবে না। গেলে বিপদে পড়তে হবে। অগত্যা অপেক্ষার পালা শুরু। তখন মোবাইল ফোন বাজারে আসেনি। খবরাখবর জানার জন্য লোক মারফত খবর নিতে হতো। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে। প্রচণ্ড ক্ষুধাও পেয়েছে। সুকেনকে জানালাম। সুকেন তখন আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্থানীয় একটি ছেলেকে মুড়ি কিনে এনে দিতে বললো। ছেলেটি কিছুক্ষণ পর অল্প কিছু মুড়ি সুকেনের হাতে দিয়ে চলে গেল। অল্প মুড়ি দেখে সুকেনের কাছে জানতে চাইলে সুখেন জানাল বর্ডার এলাকার অধিকাংশ লোকই খারাপ। স্বার্থ ছাড়া কেউ কোন কাজই করেনা। আমাদের দেওয়া টাকার অর্ধেক টাকা সে নিজ পকেটে রেখেছে। প্রতিবাদ করলে বিপদ বাড়বে। কারণ আমরা অবৈধ পথে চলছি। অগত্যা তিন জনে সামান্য করে ভাগ করে মুড়ি খেয়ে বেশী করে পানি পান করে ক্ষুধা কিছুটা নিবৃত করলাম। ইতিমধ্যে ছোট ছোট আরও কয়েকটি দল এখানে আশ্রায় নিয়েছে। আমরা বারান্দার যেখানে আশ্রয় নিয়েছি তার পাশে ২/৩ জনের বয়স্ক একটি দল অবস্থান নিল। এই দলটির দালাল একটি অল্প বয়স্ক সুশ্রী মহিলা। মেয়েটির শরীরে শাখা-সিদুরের চিহ্ন থাকায় বুঝতে পারলাম মেয়েটি হিন্দু-সধবা। বয়সের ধর্ম অনুযায়ী তার সাথে কথা বলতে ভালই লাগছিল। কথায় কথায় তার সাথে বেশ ভাব হল।
সে জানাল তার সাথে আসা ব্যক্তিরা ক্লান্ত, তাই তারা এখানে রাত থেকে পরদিন সকালে রওনা হবে। আমাদেরও রাত থাকতে অনুরোধ করল। এখানে রাত থাকলে মশায় খেয়ে ফেলবে বলায় সে বলল সে সারা রাত জেগে মশা তাড়াবে। আমাদের গাইড সুকেনকে বলল আমাদের দুজনকে তার কাছে ছেড়ে সে বাড়ি ফিরে যাক। প্রথম পরিচয়ের সময় সুকেন ওই মহিলার কাছে জানতে চাইল আমি ও স্বপন কোন সম্প্রদায়। তার উত্তরে মহিলা আমাকে তার সম্প্রদায় এবং স্বপনকে কোন সম্প্রদায় বলতে পারছেনা বলে জানায়। আমাদের কথাবার্তা হটাৎ থেমে গেল স্থানীয় আমার বয়সি দুটি ছেলের আলাপ-আলোচনা শুনে। আমরা যে বারান্দায় বসে ছিলাম সেই বারান্দায় একটু দুরে একজন মাঝ বয়সি স্বাস্থ্যবান মহিলা ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমের ভিতর তার শরীরের কাপড় কিছুটা এলোমেল হয়ে গিয়েছে দেখে ওই ছেলে দুটি যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছিল, তাতে তাদের বিকৃত মানসিকতার পরিচয় সুস্পষ্ট। তাদের কথায় আমরা বিস্মিত হলেও দালালরা কেউ কিছু মনে করল না বলে মনে হয়। হয়তো তারা এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পড়ন্ত বিকালে খবর এলো রাস্তা ক্লিয়ার এখন যাওয়া যাবে। আমরা যাওয়ার জন্য তৈরী হলাম। দালাল মহিলাকে আমরা মনঃক্ষুন্ন চিত্তে বিদায় জানালাম। আমাদের মানসিকতা এই ছিল যে, যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছি তখন দিনের ভিতর সীমান্ত পার হব। সেই মন নিয়েই আমরা দ্রুত পথ চলতে লাগলাম। সন্ধ্যার সময় আমরা সীমান্তে পৌছে গেলাম। আলো-আধারিতে সোনাই নদী অতিক্রম করলাম। সুখেনের কাছ থেকে জেনেছিলাম আমরা হাকিমপুর বর্ডার দিয়ে ভারতের মাটিতে পা রাখলাম। ভারত সীমান্তের তারালি গ্রামে এক দালালের বাড়িতে খেয়ে রাতে অবস্থান করলাম।
পরদিন সকালে সোনাই নদীতে স্নান করে সকালের খাবার খেয়ে আমরা বারাসাতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। আমরা হাকিমপুর থেকে বাসে রওনা দিলাম। বারাসাত পৌঁছেই আমরা অশোকের (ক্যানতার) সাথে দেখা করলাম। আমাদের বারাসাত পৌঁছে দেওয়ায় চুক্তি ভিত্তিক দায়িত্ব সুকেনের শেষ হলো। অশোকের আশ্বাসের প্রেক্ষিতেই আমাদের ভারতে আসা। অশোকের এক মামা নিখিল বারাসাতে থাকে। বিশ্বাস বাড়ির অনেক লোক ভারতে বড় বড় পদে চাকরি করছে। তবে রসিক লালের ছেলেরা কেউ উচ্চ শিক্ষিত নয়,তারা মিল কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। তা হলেও তারা মনের দিক দিয়ে অনেক ভাল। বারাসাত থেকে অশোক ও তার মামার সাথে ট্রেনে কলকাতায় ওদের কর্মস্থলে গেলাম। ন্যাপথোল কারখানা। একটি রুমের ভিতর ২০/২২ জন শ্রমিক ন্যাপথোল প্যাকেট তৈরীর কাজ করছে। কাজের উপর তাদের পারিশ্রমিক নির্ভরশীল। সেখানে অশোকের আর এক মামা কার্ত্তিকও কাজ করে। কার্ত্তিক লিলুয়াতে থাকে। কার্ত্তিকদা আমার পূর্ব পরিচিত। আমাকে দেখে সে খুশি হলো। অশোকের সংগে আলাপের কিছুক্ষণের মধ্যে কাত্তিকদা আমাকে জানিয়ে দিল আমি তার বাসায় লিলুয়াতে গিয়ে থাকব। আর স্বপন থাকবে বারাসাতে। আমারও ভাল লাগল। ভাবলাম বিদেশে এইটুকুতো সহজে পাওয়া যায়না। মনে মনে কিছুটা ভীতিও কাজ করছিল। কার্ত্তিকদা আমার চেনা কিন্তু বৌদিতো অচেনা, সে আমাকে কেমন ভাবে নেবে জানিনা। সে যদি আমাকে ভালভাবে গ্রহণ না করে তাহলে আমি কি করব? কোথায় থাকবো! ইত্যাদি।
দিনের কাজ শেষ। সন্ধ্যা সমাগত। সকলে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার তোড়জোড় করছে। এমন সময় একজন শ্রমিক ২ কেজির মত খোলা ন্যাপথোলের একটি প্যাকেট কার্ত্তিকদাকে দিল। এরপর আমরা বেরিয়ে পড়লাম। হাওড়া থেকে এক স্টেশন গেলেই লিলুয়া। পথে যেতে যেতে কার্ত্তিকদা আমাকে বললো, তোকে আমি আমার কাকাতো ভাই পরিচয় দেব। আমার নাম ঠিক হলো সাগর। আমাকে কম কথা বলতে বললো। সে আরও জানাল,যে বাড়িতে সে ভাড়া থাকে তারা খুবই গোড়া প্রকৃতির। সে বলল বৌদি ভাল, সবই সে সামলে নেবে। ভয়ের কিছু নেই। কথা বলতে বলতে আমরা বাসায় পৌছালাম। বাসায় ঢুকেই দাদা বৌদিকে ডেকে আমার সংগে পরিচয় করিয়ে দিল। আমাকে দেখে বৌদিকে অখুশি মনে হল না। তবে আমি কিছুটা অস্বস্তিবোধ করছিলাম। একটি মাত্র ছোট ঘর। সেই ঘরে একটাই চৌকি। বারান্দায় বেশ কিছুটা জায়গা আছে ঠিকই,সেখানে উঠানো চুলায় রান্নার কাজ করে। রান্নার সরঞ্জামাদি ঘরের ভিতর। আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র চৌকির নিচে রাখা। এর মধ্যে এক নব দম্পতি থাকে। এখানে তৃতীয় ব্যক্তির থাকার কোন সুযোগ নেই। ভাবতে লাগলাম দাদা কেন আমাকে এখানে আনলো। বৌদিকি সত্যই খুশি। এই পরিবেশে কোন মহিলা খুশি হতে পারে না। চিন্তা-ভাবনা করছি এবং ভাবছি আগামী কাল দাদাকে বলবো আমাকে অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে। রাতটুকু কোন ক্রমে কাটাতে পারলেই হয়। ভাবনার ভিতর দিয়েও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে বৌদি আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করেই আমাদের খেতে দিল।
খেতে খেতে দাদা অনেক কথা বললো। বৌদিও মাঝে মধ্যে দাদার কথার সাথে নিজেও যোগ দিচ্ছে। তাদের কথার সারসংক্ষেপ হলো দাদা-বৌদি উভয়ের পরিবারের ঘোর আপত্তি থাকা সত্বেও তারা সম্পর্ক করে বিয়ে করেছে। আর এ কারণেই তারা উভয়ই পিতৃ ও শ্বশুর কুলের সকল সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত। তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে উভয় পরিবারের লোকজন কম-বেশী জানলেও কেউ তাদের সাথে যোগাযোগ রাখে না। আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি কেউই তাদের এখানে যাতায়াত করে না। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে বাড়ি ওয়ালা থেকে শুরু করে আশপাশের লোকজন কানা-ঘুষা করে। বিয়ের পর এই ভাড়া বাসায় থাকার প্রথম দিনগুলি তাদের কাছে ছিল খুবই বেদনা বিধুর। বর্তমানে ছোট্ট এই ভাড়ার বাসায় আগের থেকে কিছুটা স্বচ্ছলতা এসেছে। আর এতদিন পরে আমিই তাদের প্রথম মেহমান। সংগত কারণে আমার আসাকে তারা খুশি মনে গ্রহণ করেছে। খাওয়া শেষে আরও কিছুক্ষণ গল্পগুজবের পর দাদা আমাকে জানাল আমার বিছানা চৌকির উপর। দাদা-বৌদি মেঝেতে ঘুমাবে। আমি আপত্তি করলাম। কিন্তু আমার আপত্তি ধোপে টিকলো না বৌদির দৃঢ়তার কারণে। অগত্যা আমাকে চৌকির বিছানায় যেতে হলো। বৌদি ছোট্ট ঘরের ভিতর দুটি মশারি টানাল। আমি শুয়ে নানান কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
গতকালের সারা দিনের ক্লান্তির পর রাতে এক ঘুমেই ভোর হয়ে গেল। ঘুম ভেঙ্গে গেলেও শুয়ে শুয়ে দাদা-বৌদির গতকালের বলা কথাগুলো মনে পড়ছে। এছাড়া এ বাড়ির লোকেদের চালচলন, লোকাচার কোন কিছুইতো আমার জানা নেই। গতকাল কলকাতা থেকে আসার সময় দাদা বলেছিল বাড়িওয়ালা খুবই গোড়া। সে কারণে তাদের সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। এমন সময় বৌদির ডাকে আমাকে উঠতে হলো। উঠার পর দাদাকে দেখলাম গতকাল কারখানা থেকে আনা লুজ ন্যাপথোলগুলো প্যাকেট করছে। বুঝতে পারলাম বাড়তি আয়ের জন্য এই অতিরিক্ত খাটুনি। আর বৌদি বারান্দায় উঠানো চুলায় রান্নার কাজে ব্যস্ত। ততক্ষণে লক্ষ্য করলাম বাড়ির মেয়ে-পুরুষ সকলেই ল্যাকটিন ও টয়লেটে যাওয়ার সময় গামছা পরে পরনের কাপড় খুলে রেখে যাচ্ছে। মেয়েরা পরনের পর গায়ে আর একটা গামছা দিচ্ছে। বৌদি হাত-মুখ ধুয়ে নিতে বললে আমিও বাড়ির লোকদের অনুকরণে প্রাতঃকৃত্য সারলাম। বৌদি এরই মধ্যে দাদা ও আমাকে চা ও মুড়ি দিল। গতরাতে দাদা বৌদির গল্পের পর আমার শঙ্কা অনেকটা কেটে গেল। দাদা কলকাতায় কর্মস্থলে যেতে চাইলে আমিও যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। কিন্তু বৌদি আমার প্রস্তাব সরাসরি না করে দিল। মনে মনে ভাবলাম দাদা চলে যাওয়ার পর বৌদি কি জানি কেমন আচরণ করে। দাদা ও আমি সকালের আহারাদি সারার পর বৌদি দাদার দুপুরের খাবার টিফিন কেরিয়ারে গুছিয়ে দিল। দাদাও তার মত গুছিয়ে নিল। বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বৌদির সাথে গোপনে কি কথা বলে গেল। দাদা বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি ঘরের ভিতর চৌকিতে শুয়ে পড়লাম। বৌদি নিজের খাওয়া শেষ করে আমার পাশে এসে বসলো। আমার মন খারাপ কিনা জানতে চাইলো,এরপর বাড়িতে কে কে আছে ? ইণ্ডিয়ায় আসার কারণ, কতদিন থাকবো, ইত্যাদি বিষয় জানতে চাইল। আমিও ধীরে ধীরে বুঝে-শুনে উত্তর দিলাম। বৌদিও অল্প কথায় আমি আসাতে সে খুশি হয়েছে বুঝিয়ে দিল। আমি বৌদির নামটা জানতে চাওয়ায় বৌদি বললো দিপালি।
কিছু সময় পর বৌদি একটি খাতা ও একটি বাজারের প্যাকেটসহ আমাকে নিয়ে চললো পাড়ার মুদির দোকানে। সেখানে গিয়ে চাল,ডাল,আলু,তেলসহ যাবতীয় মালামাল দোকানদার খাতায় লিখে দিয়ে দিলেন। মালামাল নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম। যাতায়াতের পথে ইন্ডিয়ান মেয়েদের ওড়না ছাড়া বেড়াতে দেখে লজ্জা পেলাম। বাসায় এসে বৌদি চা তৈরী করলো। চা খেতে খেতে বৌদি অনেক গল্প করলো। আমার প্রাণকাড়া বৌদি ডাক বৌদির ভাল লাগছে বলে মনে হলো। বৌদি আমাকে স্নান করতে যেতে বললো। বাসার পাশেই পুকুর। পুকুর ঘাটটা পাশের বড় গাছের ডালে ঢাকা। মহল্লার মানুষ বিশেষ করে অধিকাংশ মেয়েরাই এই ঘাটে স্নান করে। আমি যখনই ঘাটে যাই তখনই দেখি কোন না কোন মেয়েরা স্নান করছে। এই ভাবে অনেক সময় পার হওয়ার পরও আমি স্নান করতে পারলাম না। হটাৎ দেখি সাবান হাতে বৌদি এসে হাজির। আমাকে হাত ধরে হিড় হিড় করে টেনে পুকুরে নামাল।
ঘাটে স্নানরত মেয়েরা আমার পরিচয় জানতে চাওয়ায় বৌদি দেবর বলে আমার পরিচয় দিল। এরপর ওই মেয়েরা আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি কিনা বৌদির কাছে জানতে চাইল। কারণ হিসেবে বৌদিকে বললো অনেকবার ছেলেটা ঘাটে আসছে আর মেয়েদের দেখে ফিরে যাচ্ছে এই দেখেই তারা বুঝতে পেরেছে। বৌদি তাদের সাথে কথা বলতে বলতে আমার গায়ে সাবান মাখিয়ে স্নান করাল এবং নিজে স্নান করিয়ে নিয়ে এলো। বাসায় ফিরে ভিজা কাপড় পাল্টিয়ে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সন্ধ্যার আগে বৌদি চা করে আমাকে ডাকলো। চা খেতে খেতে স্নান করা নিয়ে বৌদি হালকা রসিকতা করতে লাগল। এরই মধ্যেই বৌদির সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌছিয়েছে। এই ভাবে তিন দিন কাটার পর এলো রবিবার। দাদা-বৌদি ও আমি সিনেমা দেখতে গেলাম। ছবি দেখে যখন বাসায় ফিরে এলাম ততক্ষণে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে। হাতমুখ ধুয়ে চৌকিতে শুয়ে পড়লাম।
চোখ বুজে শুয়ে আছি এমন সময় শুনতে পেলাম কে যেন এসে দাদার কাছে কুশলাদি জানছে। পাশ ফিরে চোখ মেলে চেয়ে দেখি একটি অপরূপ সুন্দরী মেয়ে দাদাকে প্রনামের পর বৌদিকে প্রনাম করলো। দাদা ও বৌদিকে মেয়েটি মামা-মামি বলে সম্বোধন করলো। দুই-একটি কথা বলার পর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকালো। আমার দিকে তাকাতেই তার সাথে আমার চোখা-চোখি হলো। মেয়েটি বেরিয়ে যেতেই দাদা-বৌদির কাছে মেয়েটির পরিচয় জানতে চাইলে তারা জানাল মেয়েটি বাড়িওয়ালার মেয়ের মেয়ে। একটু আগে মা-মেয়ে এ বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। বাড়িওয়ালার ছেলেরা দাদাকে ভাই বলে সম্বোধন করায় মেয়েটি দাদাকে মামা বললো। পরনের সাদা শাড়িতে মেয়েটিকে পরীর মতো দেখাচ্ছিল। দাদার কাছ থেকে জেনেছিলাম বাড়িওয়ালা খুবই গোড়া; তাই তাদের ব্যাপারে কোন কিছু জানার তেমন কোন আগ্রহই আমার ছিল না। তাছাড়া আমার নিজের ভিতর একটা ভীতি ছিল, একে তো মুসলমান, তারপর অবৈধ পথে এদেশে এসেছি। কেউ কোন কথা জানলে কি উত্তর দেব। এই ভেবে নিজেকে সব সময় গুটিয়ে রাখলাম।
পরদিন সকালে বারান্দায় বৌদি রান্নার কাজে ব্যস্ত এমন সময় একটি মেয়ে বৌদির কাছে এসে বসলো। দেখে মনে হলো গত রাতে যে মেয়েটি এসেছিল এটি তার ছোট বোন। স্যালোয়ার-কামিজ পরা, গায়ের রংটা উজ্জ্বল শ্যামলা। বৌদি মেয়েটাকে শিলা বলে ডাকছে। ঘরের ভিতর দাদা ন্যাপথোল প্যাকেট তৈরী করছে। দাদা ও বৌদি মেয়েটির সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি চলে গেল। দাদা স্নান করে এলে বৌদি দাদাকে খাইয়ে গোজগাছ করে বিদায় করে দিল। বৌদি ও আমি খেতে বসলাম। খেতে খেতে বৌদিকে জিঞ্জাসা করলাম সকালে আসা মেয়েটির কথা। বৌদি বললো গত রাতে দেখা সেই মেয়েটি এই। বৌদির কথায় অবাক হলাম। গতরাতে মেয়েটিকে বড় এবং পরীর মত দেখাচ্ছিল বলায় বৌদি বললো তখন মেকাপ লাগানো ও শাড়ি পরা ছিল বলে ওরকম লাগছিল। কিছু সময় পরে বৌদি আমাকে কয়েকটা পাকা কাঁঠালের কোয়া দিলে জানতে চাইলাম ভাদ্র মাসে অসময়ে কাঁঠাল কোথায় পেলে। বৌদি বললো শীলার মা বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। পরদিন দুপুর বেলা বৌদি স্নান করতে গেছে আমি ঘরে একা, এমন সময় শীলা ঘরে এসে বৌদির খোঁজ করলো। আমি স্নানের কথা বলায় সে জানতে চাইল আমি নাকি আজ সকালে তাকে চিনতে পারিনি। শীলার কথায় বুঝতে পারলাম সকালে বৌদির সংগে আমার যে কথা হয়েছিল তা বৌদি শীলাকে বলেছে। বৌদির উপর রাগ হলো। আবার খুশিও হলাম। বৌদি বলেছে বলেই তো শীলার সংগে কথা হলো। আমিও আমতা আমতা করে উত্তর দিলাম। কথায় কথায় একে অপরকে কিছুটা জানলাম। এমন সময় বৌদি স্নান করে ঘরে ফিরে এলো। শীলা বৌদির সাথে কথা বলে চলে গেল।
পরদিন সকালে দাদা কাজে যাওয়ার পর বৌদি আমাকে ও আমার সমবয়সি পাড়ার আর একটি ছেলেকে সংগে নিয়ে চললো চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় যাওয়ার পর বৌদি ওই ছেলেটার সংগে বেশী সংগ দিচ্ছে বলে মনে হলো। সমস্ত চিড়িয়াখানায় অভিমান করে আমিও দূরে দূরে থাকতে লাগলাম। সারা দিন চিড়িয়াখানা দেখার পর বিকাল বেলা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। লিলুয়া স্টেশনে নামার পরও আমি যখন তাদের থেকে দূরে দূরে থাকছিলাম তখন বৌদি আমার অভিমানের কথা হয়তো বুঝতে পারলো। তাই আমাকে কাছে আসতে বল্লেও আমি পথের দুরত্ব বজায় রেখে বাসায় এসে পৌছোলাম। এসেই কাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়লাম। বৌদিও কাপড় ছেড়ে স্নানে গেল। এই সময় শীলা এসে আমার পাশে বসে আমাদের বেড়ানো নিয়ে কথা কথা বলতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর স্নান থেকে বৌদি ফিরে এসে আমাদের দেখলো। বৌদির সাথে কিছু কথা বলে শীলা বেরিয়ে গেল।
সারাদিন ঘোরাঘুরির পর আমরা ক্ষুধার্ত ছিলাম। বৌদি আমাকে খেতে দিয়ে নিজেও খেতে বসলো। খেতে খেতে বৌদি বললো চিড়িয়াখানায় যাওয়ার কথা দাদাই নাকি আমাকে বেড়ানোর জন্য বৌদিকে নিয়ে যেতে বলেছে। বৌদি চেনে না তাই দাদাই ওই ছেলেকে সংগে করে নিয়ে যেতে বলে গেছেন। বৌদি আরও বললো, আমাদের জন্য যে কষ্ট করে গেছে তার সাথে ভাল আচরণ না করলে সে কষ্ট পেতে পারে তাই তার সাথে ভাল ব্যবহার করেছে। বৌদির কথায় কিছুটা স্বস্তি পেলাম। এবার বৌদি বললো শীলার থেকে দূরে থাকতে। সে সতর্ক করলো ইণ্ডিয়ান মেয়ের সংগে ঘনিষ্ঠতা হলে ঝামেলা হতে পারে। হাসতে হাসতে বললো ভুল করলে তাকে বিয়ে করে চিরদিনের জন্য এদেশে থেকে যেতে হবে। এ বয়সে বৌদির ওকথা ভালই লাগলো। আমি যতদূর ভাবেনি, বৌদির কথায় তা ভাবতেও ভাল লাগতে লাগলো।
সন্ধ্যার পর বৌদির অগোচরে শীলার মামাদের ঠাকুর ঘরে গিয়ে শীলাকে নির্জনে পেলাম। শীলা ওখানে বসে কি যেন একটা করছিল। আমি মনের অজান্তেই তার চিবুকে হাত দিয়ে তার মুখটা আমার দিকে তুলে ধরলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় সে প্রথমে কিছুটা অবাক হলো; পরক্ষণে আমার হাতটি সরিয়ে দিলো। আমিও ধীরে ধীরে বৌদিদের ঘরে ফিরে এলাম। পরদিন সকাল হতে শীলা ও আমি বৌদির অজান্তে অনেক কাছাকাছি চলে এলাম। সবার অজান্তে আমাকে চানাচুর ভাজা মুখে তুলে খাওয়ালো। এভাবে দুই ২/৩ দিন কাটলো। সময়টা দ্রুত পেরিয়ে যেতে লাগলো। হটাৎ এক সন্ধ্যায় শীলা আমাকে জানাল সে আগামীকাল বাড়ি চলে যাবে। আমি কারণ জিঞ্জাসা করায় সে জানাল ভাদ্র মাস তাই বাড়ি যেতে হবে। ভেবে অবাক হলাম ভাদ্র মাসের সংগে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কি সম্পর্ক ? শীলা জানাল হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ ভাদ্র মাসে বাড়ি থেকে কোথাও গেলে ওই মাসের ভিতর বাড়ি ফিরতে হয়। সব শোনার পরও আমি তাকে না যেতে অনুরোধ করলাম। শীলা তার মা ও গুরুজনদের কথায় নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল। সকলের অজান্তে সে আমার সাথে দেখা করে জানালো ২/৩ তিন দিন পর সে ফিরে আসবে। আমিও বিষন্ন মনে তার ফিরে আসার অপেক্ষায় তাকে গোপনে বিদায় দিলাম। ইতিমধ্যে বৌদি ও শীলার মামীরা বিষয়টা কিছুটা আঁচ করেছে। কারণ শীলা ইতিপূর্বে এখানে বেড়াতে এসে যাওয়ার আগে থাকার জন্য এমন পিড়াপিড়ি কখনও করেনি।
শীলা যাওয়ার মাত্র দুদিন পর সুকেন লিলুয়ায় গিয়ে হাজির হলো। আমার পরিবারের কথা বলে আমাকে তার সাথে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জোর তাগিদ দিল। আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে না গেলে তার বাড়িতে ফিরা বিপদের কারণ হতে পারে বলে জানাল। দাদা-বৌদি সার্বিক পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাকে ফিরে যেতে এবং কিছুদিন পর পুনঃরায় বাড়ি থেকে আসার অনুরোধ করলো। অগত্য কয়েকদিন পর ফিরে আসার মানসিকতা নিয়ে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাড়ি ফিরে এলাম। আমি ফিরে আসার মাস খানেক পর কার্ত্তিকদা বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিল। সে আমাকে জানালো আমি চলে আসার সপ্তাহখানেক পর শীলা ওর মামার বাড়িতে এসেছিল। মনে মনে ভাবলাম শীলা আমাকে দেওয়া কথা রেখেছে। শীলার কথা ভেবে মনটা খুব খারাপ হলো। দাদাকে একটা নতুন শার্ট উপহার দিলাম। দাদাকে বলে দিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি তার ওখানে পৌঁছে যাব।
এরপর বিভিন্ন কারণে লিলুয়ায় আবার ফিরে যাওয়া আর আমার সম্ভব হয়ে উঠেনি। পরে শুনেছিলাম দাদা ফিরে যাওয়ার মাস তিনেকের ভিতর কারখানার কাজটি ছেড়ে বাংলার বাইরে চলে যায়। সেখানে সে ট্রাক ড্রাইভারের কাজ নেয়। কিছুকাল পর সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। ততদিনে বৌদির একটা মেয়ে হয়েছিল। মেয়েটাকে নিয়ে বৌদি কোথায় চলে গেছে কেউ তা বলতে পারে না। গত ২০১০ সাল থেকে দুই-এক বছর অন্তর আমি বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারতে যাই। বিভিন্ন পরিচিত জনের কাছে দাদা-বৌদির খবর সংগ্রহের চেষ্ঠা করি; কিন্তু কেউই দাদা-বৌদির সঠিক সংবাদ দিতে পারেনি। একবার এক পরিচিত জন বলেছিল কার্ত্তিক মারা যায়নি। তবে কোথায় আছে সে জানে না। এখনও প্রতিবার ভারতের মাটিতে পা রেখেই দাদা-বৌদির কথা মনে পড়ে। জানার চেষ্টা করি কোথাও কোন সন্ধান পাওয়া যায় কিনা। দাদা-বৌদির মুখ দুখানা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পাশাপাশি মনে পড়ে লিলুয়ার ফেলে আসা সেই সোনালী দিনগুলোর কথা। শত কথা, শত কাজের মাঝে আজও মনের অজান্তে কখনও কখনও ভেসে উঠে সদা-হাস্যজ্জ্বল একটি মুখ। যার কথা কাউকে কোন দিন খুলে বলতে পারিনি। বলতেও চাইনি। তাকে আমি লালন করি। সে আছে সযত্নে আমার মনের গভীরে। দাদা-বৌদিকে খোঁজার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত তাকেও খুঁজে ফিরি।
লেখক পরিচিতিঃ
মোঃ রুহুল আমিন
অধ্যক্ষ, পাঁজিয়া ডিগ্রী কলেজ
ডাকঘরঃ পাঁজিয়া, উপজেলাঃ কেশবপুর, জেলাঃ যশোর।
সাংবাদিক ও কলামমিস্ট।
মোবাঃ ০১৭১৮-৬১১৫৫০, ই-মেইলঃ ruhulamin0655@gmail.com