কিছুদিন পূর্বে আমার এক লেখক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যাই। পারস্পারিক কুশল বিনিময়ের পর বন্ধুর পড়ার টেবিলের পাশে বসলাম। টেবিলের একপাশে কয়েকটা বইয়ের উপর একটা বই আমার নজর কাড়ল। বইটির নাম ‘ডহরী’, লেখক আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর। ওই লেখক সম্পর্কে বেশিকিছু আমার জানা নেই। তাই বন্ধুর কাছে তাঁর ও এই বই সম্পর্কে জানতে চাইলাম। এর উত্তরে লেখক বন্ধু আমাকে জানালো ভদ্রলোক প্রায় দুই যুগ যাবত সাহিত্য সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এই বইটি ডহরী কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত। বিষয়টি জানার পর বইটি সম্পর্কে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। কারণ ডহরী কৃষক আন্দোলনে কৃষকদের পক্ষে নিহত একমাত্র ব্যক্তি শহীদ গোবিন্দ দত্ত (মাষ্টার) আমার স্কুল থেকে কলেজ জীবনের ঘনিষ্ঠ সহপাঠী। এছাড়া আহত সরোয়ার মাস্টার আমার আত্মীয় ও গুরুতর আহত গোবিন্দ সরকার আমার গ্রামের ছেলে। যারা আজও তাদের শরীরে আন্দোলনের নিষ্ঠুর স্মৃতি বহন করছেন।

সহপাঠী গোবিন্দ সুদর্শন, সদালাপী, স্বাস্থ্যবান। গোলগাল চেহারা সম্পন্ন কৌতুক প্রবণ মানুষটির মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগে থাকত। ফুটবল মাঠে ব্যাকের প্লেয়ার হিসেবে তার যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। আমার সহপাঠী বন্ধুদের ভেতর যে কয়জন ঘনিষ্ঠ ছিল, গোবিন্দ ছিল তাদের অন্যতম। এই মহান কৃষক আন্দোলনে আমি অসুস্থ্যতার জন্য সশরীরে অংশগ্রহণ করতে পারিনি বটে। কিন্তু আমার অন্তর ছিল আন্দোলনমুখী। আমার ছোট দু’ভাই ও পিতা এই আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল। আমার পিতা এই আন্দোলনে চেন-অব-কমান্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। বর্ষণমুখর আন্দোলনের দিন গোলাগুলির প্রতিটি শব্দ আমার অন্তরকে তোলপাড় করেছে। এছাড়া ডহরী গ্রামে আমার ১৫/১৬ জন বন্ধুও আছে। তাই চিরতরে হারানো বন্ধুকে এই বই এর ভেতর আর একবার দেখার ইচ্ছা হল। ইচ্ছার কথা লেখক বন্ধুকে বলায় তিনি রাজী হয়ে বইটি আমাকে দিলেন। আমিও নিলাম। এরপর প্রয়োজনীয় আলাপ সেরে বইটি নিয়ে ফিরে এলাম।

পরদিন সন্ধায় বইটি নিয়ে বসলাম। বইটির বাঁধাই যথেষ্ট ভাল। কভার পেজটি রঙিন। এখানে একটা বিরান এলাকার দৃশ্য ফুটে উঠেছে। মৃত গাছে একটা মাছরাঙা অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে জঠরের জ্বালা নিবারণের। গাছটির মগডালে বসা একটা ভুবনচিল দূর থেকে উড়ে আসা সাথীর কাছ থেকে কোন সুসংবাদের আশায় প্রতীক্ষারত। মৃত গাছটিও মাতৃসম মাটির কোলে শুয়ে পড়ার প্রহর গুনছে। তার গোড়ার শেকড়গুলো নোনা পানির আক্রোশে মাটি থেকে বেরিয়ে এসেছে। মূল শেকড়টি বোধ হয় উপরের ভারী বোঝা আর বইতে চাইছে না। গাছের নিচে শক্ত বেড়াটিও হেলে পড়েছে। বেড়ার পাশে জীব জন্তু সাদৃশ্য খাদগুলো মৃত্যুকূপের মত দেখাচ্ছে। একটু নিচে নীল সমুদ্রের ন্যায় জলরাশি দৃশ্যমান। আকাশে ছিন্নভিন্ন মেঘের আনাগোনা দুর্যোগের ঘনঘটার ইঙ্গিত দিচ্ছে। গোটা তিনেক পাতা উল্টালাম। চোখে পড়লো মূল্য, বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৩৫ টাকা। সুন্দর বাঁধাই, হোয়াইট পেপারের ঝকঝকে লেখার মূল্যটি যথার্থ বলে মনে হল। পরের পৃষ্ঠায় বইটির উৎসর্গ লেখা হয়েছে। পড়ে খুব ভালো লাগল, বইটি লেখক উৎসর্গ করেছেন ২২ জুলাই ১৯৮৮ সালের ডহরী কৃষক বিদ্রোহে নিহতদের স্মরণে। মনের অজান্তেই অসংখ্য ধন্যবাদ জানালাম লেখককে। বাস্তবতায় ওই আন্দোলনে দুইজন নিহত হয়েছিলেন। একজন আমার বন্ধু গোবিন্দ মাস্টার অন্যজন পুলিশ। নিহত গোবিন্দ দত্ত কৃষকদের পক্ষে এবং পুলিশ পুঁজিপতি আতিয়ার খাঁ’র পক্ষে। গোবন্দি দত্ত কৃষকের স্বার্থে আন্দোলনে এসে নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে কৃষক সমাজকে চিরঋণী করে গেলেন। আর অর্থের টান বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে হীন স্বার্থে দায়িত্ব পালন করতে এসে লাশ হয়ে ফিরে গেলেন পুলিশ ব্যক্তিটি। এখানে একটা প্রশ্ন দেখা দেয়- লেখক কি পুঁজিপতি আতিয়ার খাঁ’র পক্ষে অস্ত্রধারী নিহত পুলিশকেও উৎসর্গ করলেন? যদি তাই হয়ে থাকে তবে সেটা মানবিকতার কোন পর্যায়ে পড়ে।

পরের পাতায় লেখক তার অন্যান্য বইয়ের তালিকা প্রকাশ করে তার রচিত সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ধারণা দিয়ে পাঠকদের কৃতার্থ করেছেন। এর ঠিক পরের পাতায় এসেই আমি প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম। লেখক তাঁর মুখবন্ধের প্রথম লাইনে বলেছেন, “ভাবনার অলীক সমুদ্রে মাঝে মধ্যে আমি বখতিয়ারের ঘোড়া ছুটিয়ে দেই”। এই লাইনটি বিশ্লেষণ করলে সমগ্র উপন্যাসটি সম্পর্কে ধারণা জন্মে। অলীক শব্দের অর্থ অসত্য, মিথ্যা, অমূলক। অলীক শব্দটি ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে উপন্যাসটির কৈফিয়ত দেয়া হয়েছে। কোন গল্প, উপন্যাস ঘটনাপ্রবাহ কাহিনীতে পাঠকের মনে যদি ওই সৃষ্টি সম্পর্কে অলীক কিছু ধারণা জন্মে ; তবে স্বাভাবিকভাবে ঐ বিষয়টির প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায়। অলীক গল্প ফেঁদে শিশুদের খুশি করা গেলেও পরিণত পাঠককে খুশি করা যায় না। লেখক বলেছেন “গল্প লেখার পর আমি ডহরী গিয়েছিলাম” এই ডহরী বাস্তব ডহরী। মুখবন্ধের শেষে লেখককে আশা-নিরাশার দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান দেখতে পেলাম। হতাশা সেখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে।

ডহরী পড়ার পর আমার মনে হয়েছে এটা না হয়েছে গল্প, না হয়েছে সার্থক উপন্যাস। আমরা জানি উপন্যাস হচ্ছে এমন একটি বিশেষ সাহিত্যকর্ম, যাতে লেখকের জীবন দর্শন ও জীবনানুভূতি কোন বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে বর্ণনাত্মক শিল্পকর্মে রূপায়িত হয়। সমগ্র জীবনের প্রতিচ্ছবি এতে ফুটে ওঠে বলে এর পটভূমি থাকে বিস্তৃত। ব্যাপকতার আকৃতি, সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘটনা বিন্যাস, আকর্ষণীয় গল্পরস, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চরিত্রসৃষ্টি, মনোমুগ্ধকর বর্ণনা, সাবলিল সংলাপ ইত্যাদি লক্ষণ সার্থক উপন্যাসের অভিপ্রেত। উপন্যাসের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, এতে কোন একটি কাহিনীর বর্ণনাই প্রধান হয়ে থাকে। মানব জীবনের ঘটনাবলী বর্ণনা দানের সঙ্গে সঙ্গে, জগৎ ও জীবন সম্পর্কিত লেখকের বিচিত্র উপলব্ধি উপন্যাসের মধ্যে প্রকাশ পায়। একটা কথা আমার বার বার মনে হয়েছে, গল্প লেখার পূর্বে লেখক যদি ডহরী যেতেন তাহলে এটা একটা ভাল উপন্যাস হতে পারত।

লেখক “কল্পনায় অলীক” শব্দ দ্বারা কৈফিয়ত দেয়ার চেষ্টা করলেও ঐতিহাসিক সত্যের দায়ভার এড়াতে পারেন না। ‘২২ শে জুলাই ১৯৮৮’ ডহরী কৃষক আন্দোলন ঐতিহাসিক সত্য। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টি স্বীকৃত। এমন ঐতিহাসিক সত্য নিয়ে তামাশা করার কোন অবকাশ নেই। ঐতিহাসিক সত্যের প্রেক্ষাপটে বা পটভূমিকায় ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করা যায়। কিন্তু খণ্ডিত বা বিকৃত করা যায় না, উচিতও নয়। তাহলে লেখক কি ঐ আন্দোলনকে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন বলে স্বীকার করেন না?

ডহরী” ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের ব্যাপ্তি খুলনা বিভাগ। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বাম সশস্ত্র উপদলীয় কোন্দল, নদীর ঢলে প্লাবিত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী পুঁজিপতি আতিয়ার খাঁ এর ভেড়ীবাঁধ। দরিদ্রক্লিষ্ট কৃষকদের ফসলের জমি পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ডহরী রচিত হলেও বাস্তবতার ছোঁয়া এখানে খুব কমই অনুভূত হয়। এখানে প্রশাসন ও বিচার বিভাগের যে দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে তা অকল্পনীয়। সকালে ফিফটি ফোরে ধরা আসামি দিনের দিন আদালতে বেকসুর খালাশ কল্পনাও করা যায় না। এছাড়া বিপ্লবের ক্ষেত্র বা পটভূমিতেও অপরিপক্কতার ছাপ সুস্পষ্ট। আমরা শরৎচন্দ্রের “পথের দাবী” রবীন্দ্রনাথের “চার অধ্যায়” বঙ্কিমের “আনন্দ মঠ” সতীনাথ ভাদুড়ীর “জাগরী” গোপাল হালদারের “একদা” বনফুলের “অগ্নি” ইত্যাদি উপন্যাস বৈপ্লবিক প্রেক্ষাপটে রচিত হতে দেখি। পথের দাবী’তে সব্যসাচী ও ভারতির যে ভূমিকা এখানে তা একেবারে অনুপস্থিত। এখানে ফিফটি ফোরের ছাড়া পাওয়া গোবিন্দ ও শ্যামের নারায়ণপুর স্কুলে সংবর্ধনার সময় বুধিয়া দামিনীর ফুলের মালা পরানোর মধ্য দিয়ে গোবিন্দের ধমনীতে বখতিয়ারের ঘোড়া ছুটানোর মাধ্যমে যে বিপ্লবের জন্ম তা বিচার্য।

সরকারী প্রশাসন যন্ত্রের মোকাবেলায় বিপ্লবীরা যে যেখানে যতটুকু শক্তির প্রয়োগ দেখিয়েছেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা অবাস্তব। সরুপপুর শ্মশানে অফিসারসহ জীপ ভর্তি পুলিশ দেখে গোবিন্দ ভয়ে হাঁটু গেড়ে প্রস্রাব করতে বসেছে; মুহূর্তের ভেতর সেই গোবিন্দের মুখে পুলিশকে বলতে শোনা গেল সী ইজ রেপড বাই পুলিশ। ইউ এ্যাণ্ড ইয়োর ফোর্সেস ইজ রিসপনসিবল হার সুইসাইডাল ডেথ। পাশাপাশি অফিসারসহ জীপ ভর্তি পুলিশকে গোবিন্দ ও আশফাক যে ভাবে মোকাবেলা করেছে সেটা অবাস্তব না হলেও অবিশ্বাস্য বটে। নিজেরা সম্পূর্ণ অক্ষত থেকে শুধু মোকাবেলাই নয়, পুলিশকে হত্যা করে নির্দ্বিধায় পুড়িয়েছে। এছাড়া এলাকার বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে একসূত্রে দেখানোর ব্যর্থ প্রয়াস লক্ষণীয়।

প্রকৃতি বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখককে কবি জীবানন্দের মত তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় তুলে ধরার প্রয়াস লক্ষণীয়। কিন্তু তুলতে গিয়ে ঘটনার সংগে বিন্যাসের সংশ্লিষ্টতা না হওয়ায় বিষয়টি লেজে-গোবরে হয়ে গেছে। লেখক জলাবদ্ধতার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, পাঁজিয়া অবধি জায়গায় জায়গায় রাস্তা জাগনা অথচ ডহরী’র উজানে প্লাবিত সরুপপুর রাস্তায় পুলিশের জীপ ছুটিয়েছেন। প্রকৃতির বর্ণনায় শব্দবিভ্রাট ও ইচ্ছাকৃত দুর্বোধ্য শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। পড়তে গিয়ে অসংলগ্ন কথা-বার্তার কোথাও মাঝে মাঝে মনে হয়েছে এই সৃষ্টির স্থায়িত্ব কতটুকু। কোথাও কোথাও লেখকের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া গেলেও বেশিক্ষণ সেটা ধরে রাখতে সক্ষম হননি। লেখার ভেতর মেঘলা চাঁদনী রাতের ডুব সাঁতার খেলার মত মনে হয়েছে। লেখকের বড় সাফল্য তার ভাগ্য। রামচন্দ্রের জন্মের ষাট হাজার বছর পূর্বে বাল্মিকী মুনি নাকি মহাকাব্য রামায়ণ রচনা করেছিলেন। তেমনি লেখকের কল্পনায় ডহরী কিছুটা বাস্তবতা পেয়েছে গোবিন্দ শহীদ হওয়ার আট/দশ বছর পর; তবে সেটা ওয়াপদা বাঁধ কাটার পর। একটা বাম সশস্ত্র সংগঠনের সহযোগিতা জলাবদ্ধ এলাকার কৃষককুল নদী বাহিত পলি উত্তোলনের মাধ্যমে তাদের ফসলী জমি পুনরুদ্ধার তথা ফসলের উপযোগী করার নিমিত্তে সরকার বাহাদুর জোয়ায়-ভাঁটা প্রচলন করে। ফলে জোয়ারের সময় বিল সংশ্লিষ্ঠ গ্রামগুলো নোনা পানিতে তলিয়ে গিয়ে বসত এলাকার ঘর বাড়ি ও বৃক্ষরাজির প্রচুর ক্ষতি হয়।

লেখকের বর্ণনা শুনে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে কোন শহুরে যান্ত্রিক যানে চড়ে যাওয়ার সময় জানালা দিয়ে যে গ্রাম দেখেছেন তার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। শব্দ সংযোজনের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও সমর্থন যোগ্য। লেখকের পুঁজিপতিকে সামান্ত প্রভু বলার মাধ্যমে তার যুগ চেতনা সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয় ফুটে ওঠে। লেখক উপন্যাসিক হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার বশবতী হয়ে বই এর সংখ্যা বাড়ানোয় প্রয়াসী হয়েছেন। বই এর কলেবর বৃদ্ধির জন্য অনাবশ্যক বর্ণনা দেখা যায়। আশফাকের প্রেমের কাহিনী যথেষ্ট অপরিপক্ক। একটা সার্থক কৃষক আন্দোলনকে যেনতেন প্রকারে দেখিয়ে আন্দোলন ও গোবিন্দকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন লেখক।

ধর্মীয় ব্যাপারেও লেখকের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। যে কোন ধর্মের ক্ষেত্রে পাঠের সময় সকল মানুষকেই শুদ্ধভাবে পাঠ করার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকতে হয়। লেখক একটা সম্প্রদায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ভুল স্ত্রোত্র রচনায় ঐ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতির উপর প্রচণ্ড আঘাত করেছেন। লেখক উপন্যাসের শেষে ঐতিহাসিক সত্যটি গ্রহণ করে উপন্যাসটি শেক্সপিয়রীয় ট্রাজেডি হিসাবে দেখিয়ে সত্যের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। আলোচনার শেষে বলা যায় লেখকের ব্যর্থতার মাঝেও অনেক ক্ষেত্রে সফলতাও আছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বাদে উপন্যাস রচনায় লেখকের আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যায়। পরিস্থিতির শিকার দারিদ্র ক্লিষ্ট কৃষকের পেশার পরিবর্তন, দৈনন্দিন জীবন যাত্রা নির্বাহের কদর্যতা ইত্যাদি অনেক তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় তুলে আনতে সক্ষম হয়েছেন। সর্বশেষে বলা যায় ডহরী উপন্যাস লেখকের পরবর্তী সার্থক উপন্যাস আসার পথকে ইঙ্গিত করছে।

[২০০০ সালের ২ জুন এই লেখাটি প্রস্তুতের সময় আহত সরোয়ার মাস্টার ও গোবিন্দ সরকার জীবিত ছিলেন]